দেশি ব্র্যান্ড চলতি ট্রেন্ড

সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়ে আসে নতুন ট্রেন্ড, নতুন রং। আবহাওয়াও প্রভাব ফেলে ফ্যাশনে, পরিবর্তন আসে কাপড়ে, প্যাটার্নে। ফ্যাশন সচেতনদের নজর দেখা যায় আন্তর্জাতিক আঙিনায়। ক্রেতা-সন্তুষ্টি মেটাতে দেশীয় ফ্যাশনে তাই দেশি মোটিফের সঙ্গে চল এখন আন্তর্জাতিক মোটিফ, প্যাটার্ন ও কাটিংয়ের। আর এ চলতি ট্রেন্ডই দেখা যায় এই ঈদ উত্সবে।

 

তবে ব্যাপারটা যে ঈদ! তাই গতানুগতিক মুখস্থ পরিবর্তনগুলোর বাইরে নতুনত্ব এবারও থাকছে। ডিজাইনারদের পরিকল্পিত আয়োজনে তাই ঈদ আরো রঙিন।

 

এবার কিছুটা উপমহাদেশীয় পোশাকী অনুপ্রেরণায় দেশীয় ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে পেয়েছে নতুনত্ব। যেহেতু এবারের ঈদ গরমে তাই রং নির্বাচনে ওয়ার্ল্ড ট্রেন্ড ফোরকাস্টিং কাউন্সিলের ২০১৮-১৯ সালের নির্বাচিত কালারকে মাথায় রেখে দেশীয় ট্রেন্ডি ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো আর ডিজাইনাররা রাখতে পারেন বিশেষ কিছু রং ।

 

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কয়েক গণ্ডিতে এখনও চলমান লম্বা কাটিংয়ের কামিজ। কামিজ ডিজাইনে তাই এবারের ঈদে ঘুরেফিরে রয়ে গেছে লং প্যাটার্ন। এ রকমই জানালেন ফ্যাশন ব্র্যান্ড  জেন্টল পার্কের চিফ ডিজাইনার শাহাদত্ চৌধুরী বাবু। তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ মানুষই এখন ফ্যাশন সচেতন। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা ফ্যাশন নিয়ে অনেক ধারণা রাখে। ফ্যাশনের চলতি ট্রেন্ড, আন্তর্জাতিক ডিজাইনের খোঁজখবর রাখে। তাই তাদের চাহিদামতোই করা হয়েছে এবারের ঈদের পোশাকের ডিজাইন। চলতি কাটিং, প্যাটার্নের সঙ্গে রঙে দেওয়া হয়েছে নজর।’

 

এবার ফ্যাশন টপ, ড্রেস, ক্রপ টপ আর স্কার্টের ব্যবহার বাড়তি আনন্দ যোগ করবে পোশাকের উপস্থাপনায়। থিম নির্ভর কাজ করে এমন যুগোপযোগী ব্যান্ডগুলো নিজেদের থিম অনুযায়ী মোটিফ ব্যবহার করে কাপড়ে প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি, কারচুপি আর হাতের কাজ দিয়ে তৈরি করছে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন দেশীয় পোশাকের কালেকশন। প্রিন্টের মোটিফে গত বছরের মতোই এবারো ফ্লোরাল প্রিন্ট ও ভিনটেজ আউটলাইন থিমে চলবে। এ ছাড়া কাপড়েও থাকছে ভিন্নতা। গর্জিয়াস সিল্ক, হাফ সিল্ক, শিফন, জর্জেট আর ডেকোরেটিভ কাপড়ের পাশাপাশি গরমের কথা চিন্তা করে ডিজাইনাররা ব্যবহার করছেন মডাল, ভিসকস, চিজ কটন ও ভয়েল। কাপড়ে প্রিন্টের বৈচিত্র্য এবং সমকালীন ফিউশন বেশ ফোকাস হবে এবারের ঈদে। তবে ফ্যাশনে সময়টা যেহেতু গ্রীষ্মকাল, সেহেতু বডি কাটিংয়ে দুই-চারটা নতুনত্ব তো চোখে পড়েই। তাও পূর্ব ফ্যাশনের বাইরে নয়। তেমনি কিছু ডিজাইনের মধ্যে ঢোলা, কার্ভ স্লিভ, বেল স্লিভ উল্লেখ্য। নেকের পরিবর্তন দেখা যায় বেশ। সেমি বোট নেক, পরট্রেইট, জুয়েল, স্কয়ার, গেদার্ড নেক, সেট ইন স্লিভ নেকের মতো প্যাটার্নেও উন্নত ডিজাইন বেশি দেখা যায় এখন। নেকে এমব্রয়ডারি, প্রিন্টের কাজ এখন ফ্যাশনের বাইরে। তবে বডিতে হালকা কাজ ট্রেন্ডের মধ্যেই।

 

সেইলরের হেড অব ব্র্যান্ড রেজাউল কবীর জানান, ‘পোশাকের কাটছাঁট, হেমলাইন এবং নকশাতেও এসেছে পরিবর্তন। এসেসট্রিক কাট অর্থাত্ পোশাকের পেছনে লম্বা এবং সামনের খাটো কাট এবার ঈদে ট্রেন্ডি কাট হয়ে উঠবে। সালোয়ার-কামিজের বাইরে এবার স্কার্ট, কুর্তা, আনারকলি, গাউন, ফ্রক স্টাইলের পোশাকও বেশ গুরুত্ব পাবে। বেশি ঘের দেয়া লং স্কার্টের চলও এসেছে। কুর্তিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। লং কুর্তি, প্রিন্ট কুর্তি, পকেট দেওয়া কুর্তি নানা রূপে হাজির হবে। নেকলাইন, বটমলাইন ও হাতা সবটাতেই এই বৈচিত্র্য চোখে পড়বে। ছেলেদের পাঞ্জাবির ডিজাইনে এবার বটমে কাবলি কাটটা জনপ্রিয়তা পাবে। প্রিন্ট শার্টের জনপ্রিয়তা তরুণদের মাঝে বেশি দেখা যাবে। কলার ও প্ল্যাকেটের ভিন্নতা দিবে ফ্যাশনে ভিন্ন মাত্রা। টুইল টিনো প্যান্টে ন্যারো শেপটা এবারও চলবে ঈদে। পাঞ্জাবির কাটটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্লিমফিটই প্রাধান্য পাবে। তরুণীদের পোশাকে বর্ডার এমব্রয়ডারি ও পাইপিং ভ্যালু এডিশন হিসাবে গুরুত্ব পাবে। তবে সহজ এবং আকর্ষণীয় প্যটার্নের ছিমছাম পোশাকেই ঈদ কাটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য হতে দেখা যাবে শহুরে কলেজ ও  বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীদের।’

 

ক্যাটস আই-এর ডিজাইনার ও পরিচালক সাদিক কুদ্দুস জানান, ‘ফ্যাশনের দুটি ধারা—ট্র্যাডিশনাল ও ফিউশন। মানুষও এই দুই ধারায় পোশাক পরতে পছন্দ করে। একদল সব সময় পোশাকে ট্র্যাডিশনাল ধারা বজায় রাখার চেষ্টা করে। ফ্যাশন দুনিয়ায় যতটা হাওয়া বদলই ঘটুক না কেন, এতে তাদের যেন কিছুই আসে-যায় না। আরেক দল আছে, যারা সময়ের সঙ্গে নিজের বসন-ভূষণে পরিবর্তন পছন্দ করে। চলতি হাওয়ায় গা ভাসাতে আনন্দ পায় তারা। এই দলের বেশির ভাগই তরুণ। আমাদের এখানেও সেই ধারাটা অব্যাহত আছে। আগামীতেও থাকবে।’

 

এবার ঈদেও দেশীয় পোশাককে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা থাকবে ডিজাইনারদের। ফলে ফিউশনধর্মী পোশাক দেখা যাবে। সর্বোপরি, ঈদের সময়ে পোশাক হতে হবে হালকা রং, পাতলা কাপড়, আরামদায়ক কাটে তৈরি। যাতে ঈদের পোশাকটিও দৈনন্দিন কাজকর্ম, বন্ধুদের আড্ডা বা নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করা যায় সারাবছরই।
              মডেল    –   নিকি ও মানসী
              পোশাক    –   জেন্টল পার্ক